প্রশ্নপত্র প্রণয়নে মাধ্যমিক শিক্ষকগণের আগ্রহ অনাগ্রহ এবং বাস্তবতা

প্রশ্নপত্র প্রণয়নে মাধ্যমিক শিক্ষকগণের আগ্রহ অনাগ্রহ এবং বাস্তবতা 

-- মোঃ আজহারুল ইসলাম (জুয়েল)

Published in newspaper:

1. https://drive.google.com/file/d/1OvvhZg5vzQcK3Ai_5eMnUGrdC2zT0W-I/view?usp=drive_link

2. https://www.dainikshiksha.com/bn/news/the-interest-disinterest-and-reality-of-secondary-teachers-in-preparing-question-papers-344828


শিক্ষকতা এমন এক পেশা যে পেশায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক ঠিক যেন পারিবারিক বন্ধনের মতই একে অপরের পরিপূরক যা শিখন শেখানো থেকে শুরু করে মূল্যায়ন প্রক্রিয়া পর্যন্ত এক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। সেক্ষেত্রে সঠিক পাঠদান ও শিখন শেখানো প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে বড় অবদান যা তা হচ্ছে মূল্যায়ন প্রক্রিয়া যার অন্যতম কাজই হচ্ছে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকগণ নিজেরাই প্রশ্নপত্র তৈরি করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা। একটি সফল শ্রেনিপাঠদান তখনই সার্থক যখন সঠিক মূল্যায়নের মাধ্যমে তা পুর্নাঙ্গ রূপ লাভ করে। তবে এই মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় শিক্ষকগণকে ঠিক ততটা দক্ষতা অর্জন করতে হয় যতটা তাঁরা পাঠদানের ক্ষেত্রে অবদান রাখে। এক্ষেত্রে মূল্যায়ন প্রক্রিয়া পদ্ধতি, ধরণ, সময়, পাঠ্যসূচিলব্ধ জ্ঞান এবং সর্বোপরি মেধা ও প্রজ্ঞার মাধ্যমে একজন শিক্ষক পাঠদান সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শিখন শেখানো থেকে শুরু করে মূল্যায়নের শেষ ধাপ পর্যন্ত যেতে পারলেই মনে করতে কোন অসুবিধা নেই যে তিনি একজন ভালো দক্ষ শিক্ষক। কিন্তু বাস্তবে যাঁরা শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত তাঁরা শ্রেনী পাঠদানকে যতটা গুরুত্ব দেয ঠিক ততটা কিন্তু মূল্যায়ন করার ক্ষেত্রে, প্রশ্নপত্র প্রণয়নের ক্ষেত্রে এটা মাথায় রাখার প্রয়োজন মনে করে কি না, তা বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকগণ নিজেদের প্রশ্ন করলেই উত্তর পেয়ে যাবেন হয়তো। এই চিত্রটা চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়ার মত কোন কারণ নেই বরং বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানে প্রশ্নপত্র কেনা-বেচার যে হিড়িক তার চিত্র সহজেই অনুমেয়। বাস্তব চিত্র এমনই যে শুধু গ্রাম এলাকার প্রতিষ্ঠানই নয় বরং শহুরে এলাকার মাধ্যমিক স্কুল ও মাদ্রাসাগুলোর বেশির ভাগই নিজস্ব বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকগণের দ্বারা প্রশ্নপত্র তৈরি না করে বইপ্রকাশনা বা ব্যবসায়িক ভাবে যারা প্রশ্নপত্রের ব্যবসা করে তাদের উপরই নির্ভরশীল। এক্ষেত্রে এনসিটিবি অথবা মাউসির যতই নির্দেশনা আমাদের দেয়া হোক না কেন যতক্ষণ না আমাদের বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকগণের মাঝে প্রশ্নপত্র প্রণয়নে আগ্রহ না থাকবে বা নিজেদের দায়িত্ববোধ না জন্মাবে ততক্ষণ পর্যন্ত শিক্ষা লাভের সামগ্রিক কাংখিত ফলাফল আমরা কখনো আশা করতে পারি না। কারণ যে শিক্ষক প্রশ্নপত্র প্রণয়নে দক্ষ সে সত্যিকার অর্থেই পাঠদানের পাশাপাশি সার্বিকভাবেই দক্ষ তবে এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান প্রধান থেকে বিষয়ভিত্তিক প্রতিটি শিক্ষককেই আন্তরিকভাবে পেশার প্রতি আরো বেশি আগ্রহ দেখানো এখন সময়ের দাবি। এরকমও শোনা যায়, যদিও প্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষক আছেন যাঁরা প্রশ্নপত্র প্রণয়নে আগ্রহী থাকলেও খরচ অনেক বেশি হয়ে যায় অথবা কি দরকার অযথা সময় নষ্ট করার এরকম অজুহাত দেখায় বিধায় প্রতিষ্ঠান প্রধান থেকে শুরু করে কিছু শিক্ষকও প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব প্রশ্নপত্র প্রণয়নে নিরুৎসাহিত করেন অথবা অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। এমন কি যাঁরা প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করতে আগ্রহী তাঁদেরকেও নিরুৎসাহিত করা হয় বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে। সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে আমরা সবাই শিক্ষক দাবী করলেও আমাদের অনেকেই নিজেদের মনকে প্রশ্ন করে আত্মোপলব্ধি করতে পারি এই ভেবে আমাদের প্রতিষ্ঠানের সার্বিক উন্নতিকল্পে আমরা কি সার্বিকভাবে নিজেদেরকে আত্মনিয়োগ করেতে পেরেছি! এ প্রশ্ন আসাও স্বাভাবিক, আমরা কি এখনো পরমুখাপেক্ষিতা ধরে সামনে এগোতে থাকবো! নাকি নিজেদের আরো বেশি সমৃদ্ধ করার মানসে মূল্যায়নের মাপকাঠি হিসাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়নে আরো বেশি সক্রিয় হবো যাতে করে আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিখন শেখানোর পাশাপাশি তাঁদের মেধা জ্ঞান আহরণের অগ্রগতি যাচাইসহ নিজেদের প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলে ভূমিকা রাখতে পারি। এত প্রশিক্ষণ! এত পরামর্শ! এত ত্যাগ তিতিক্ষা! এত একাগ্রতা নিয়ে শিক্ষকতা নামক মহান পেশায় যাঁরা নিয়োজিত আছেন এই পেশাটাকে পূর্নাঙ্গ রূপ দিতে কোন প্রকার ঘাটতি না থাকারই কথা! শিক্ষকতা কি পাঠদানই সীমাবদ্ধ থাকার কথা নয়। আসলেই আমরা একটু সচেতনতা নিয়ে, একটু নৈতিকতা নিয়ে, একটু একাগ্রতা নিয়ে শিক্ষকতা পেশাকে মূল্যায়ন করতে চাইলে আমাদেরকেই শুরু করতে হবে প্রাতিষ্ঠানিক সার্বিক স্বার্থে ব্যবসায়িক কোন রকম কেনা প্রশ্ন দিয়ে শিক্ষার্থীদের আহরিত জ্ঞান মূল্যায়ন না করে নিজেদের সৃষ্ট প্রশ্নপত্রে পরীক্ষার মাধ্যমে দেখিয়ে দিতে পারি আমরাই সেই শিক্ষক যাঁরা শ্রেনিপাঠদান ব্যবস্থাপনা থেকে মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার যত ধাপ তার সম্পুর্ন আমরাই করতে পারি, আমরাই শ্রেষ্ঠ শিক্ষক, আমরাই সেরা। এবং আমরাই পারি পুরাতন ধ্যানধারণাকে পিছনে ফেলে সত্যিকার অর্থেই নিজেদের প্রতিষ্ঠানকে সমাজের কাছে তুলে ধরতে। আর কোন কেনা প্রশ্ন নয় বরং নিজেরাই প্রশ্ন করবো, সহকর্মীদের উত্সাহিত করবো, প্রতিষ্ঠান প্রধানকে উদ্বুদ্ধ করে শিক্ষার্থীদের সার্বিক মূল্যায়ন উন্নতির পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল রাখার চেষ্টার ব্রত নিয়ে আমাদের নিজস্ব দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকবো। এতকিছুর পরেও একশত ভাগ কাজ আমরা হয়তো আশা করতে না পারলেও আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করেছি এটাই সার্থকতা। এবং প্রাতিষ্ঠানিক এই বাস্তবতা থেকে আমরা সবাই নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানকে পরনির্ভরশীল প্রশ্নের মুখাপেক্ষী না হয়ে, অপরের উপর নির্ভরতা না রেখে এনসিটিবি হোক বা মাউসির নির্দেশনা হোক, সামগ্রিক মেধা মনন ও একাগ্রতাকে কাজে লাগিয়ে দক্ষ প্রশ্নপত্র প্রণয়নকারী হিসাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করাও কিন্তু অনেক বেশি আনন্দের অনেক বেশি আত্মতৃপ্তির। আর এভাবে যদি আমরা নিজেদের প্রতিষ্ঠানকে স্বয়ংসম্পূর্ণ হিসাবে দাড় করাতে পারি তবে সেটাই হবে আমাদের সার্বিক উন্নতি এবং সার্থকতা।







আজহারুল ইসলাম জুয়েল
অবসরপ্রাপ্ত ইংরেজি শিক্ষক 
ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার কলেজিয়েট ইনস্টিটিউট পঞ্চগড় 
ফোন- ০১৭১৬৮৪৯৮৪৮
ইমেইল- azharul1965@gmail.com
হোয়াটসঅ্যাপ- ০১৭০১৯৮০১৮১



Comments

Popular posts from this blog

অবসরপ্রাপ্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী, কল্যাণ তহবিল ও অবসর সুবিধা ও প্রেক্ষিত

বিশ্ব শিক্ষক দিবস ২০২৫ ও বাংলাদেশের শিক্ষক সমাজ

ড. মুহাম্মদ ইউনূস, জাতীয় সরকার ও প্রেক্ষিত