বিশ্ব শিক্ষক দিবস ২০২৫ ও বাংলাদেশের শিক্ষক সমাজ


বিশ্ব শিক্ষক দিবস ২০২৫ ও বাংলাদেশের শিক্ষক সমাজ


-- মোঃ আজহারুল ইসলাম (জুয়েল)

Published in newspaper:

1. https://drive.google.com/file/d/1UydZf5LZwscV1dsZdLSzvLtOxQwH0qpr/view?usp=drive_link

2. https://www.dainikshiksha.com/bn/news/world-teachers-day-and-the-bangladesh-teachers-union-344905

3. https://www.amaderbarta.net/bn/news/world-teachers-day-and-the-bangladesh-teachers-union-344905 

 

গ্লোবাল ভিলেজের এই যুগে আবারও এক বছর পরে আসা বিশ্ব শিক্ষক দিবসে সারা বিশ্বের শিক্ষকগণ যে আনন্দ উল্লাস আর নতুন উদ্যোমে নতুন দিগন্তের পানে পথ চলার শক্তি নিয়ে এগিয়ে চলে ঠিক এই মুহূর্তে বাংলাদেশের শিক্ষক জাতি এবার মনে হয় ততটা আগ্রহ নিয়ে বিশ্ব শিক্ষক দিবসকে খুব একটা মনেপ্রাণে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে হীনমন্যতায় ভুগছেন দেশের শিক্ষক জাতির মানসম্মান যেখানে ধুলোয় মিশে যাওয়ার মত অবস্থা আর এ অবস্থায় শিক্ষকগণ ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থায় থেকেও মুখে শুষ্ক হাসি নিয়ে হয়তো কোন রকমে দিবসটি অতিবাহিত করছে অথবা পালন করছে মনের মাঝে কোন রকম আত্মতুষ্টির ঢেকুর না গিলেই। গত এক বছরে আমাদের দেশের শিক্ষক জাতিকে বঞ্চনা লাঞ্ছনার যে চিত্র দেখতে হয়েছে সেই চিত্র আর গ্লানির ক্ষত নিয়ে শিক্ষাদানে নিয়োজিত এই শিক্ষক জাতির অনেকেই হয়তো এই ভেবে দিনাতিপাত করছে সেই অবসরের দিনটিতে যাওয়ার অপেক্ষায়। মব জাস্টিসের মত ভয়াবহতা আর নতুন করে উঠে আসা উগ্র মানসিকতার নতুন এই বাংলাদেশে শিক্ষকতা করা যে কত দুরূহ হয়ে গেছে তা শুধু গ্রাম থেকে শহরের স্কুল মাদ্রাসা নয় বরং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে এর বিরূপ প্রভাব। কোথাও নেই কোন নিয়ম শৃংখলাবোধ, কোথাও নেই কোন নিয়ম নীতির বালাই, সবই চলছে যেন মব সন্ত্রাস আর মব জাস্টিসের রাজত্ব আর শিক্ষক জাতির শুধু চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিই বা করার আছে তবে এক্ষেত্রে শিক্ষক নামের কলংক কিছু ব্যক্তিরাও কিন্তু কোন অংশে কম দায়ী নয় যারা এই মহান পেশাকে কলংকিত করেছে বা করছে । ফ্যাসিস্ট সরকারের বিদায়ের পর সেই ফ্যাসিস্টদের কায়দায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যেন দখলদারিত্বের জায়গায় পরিনত হয়েছে। সেই সাথে শিক্ষকদের মাঝে প্রতিশোধের রাজনীতি আর উপরের সিঁড়িতে উঠার হিংসা চরম পর্যায়ে আর এক্ষেত্রে কিছু শিক্ষক তাদের নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থে শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করাও কিন্তু কম হয় না। তবে সরকার বদলের সাথে সাথে শিক্ষা পেশার সাথে নিয়োজিত নিবেদিত অধিকাংশ মানুষ যে আশা আকাংখা নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি একটা অগাধ বিশ্বাসের স্তম্ভ গড়ে তুলেছিল তা আস্তে আস্তে প্রায়ই ধুলিতে মিশে যাওয়ার মত অবস্থা। এক্ষেত্রে শিক্ষকগণ ব্যক্তি স্বার্থে নয় বরং দেশ ও জাতির স্বার্থে রাজনীতি করবে, শিক্ষকগণের মেধা ও প্রজ্ঞার মাধ্যমে রাজনীতিতে অবদান রেখে দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে এটাই স্বাভাবিক তবে শিক্ষকদের ব্যক্তি স্বার্থে রাজনীতি একদিকে যেমন শিক্ষাক্ষেত্রে নৈরাজ্যের জন্য দায়ী তেমনি অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের মহা সোপান উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বিরাট একটা হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে এবং এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় শিক্ষকদের দলাদলির চরম বলির স্বীকার হয়ে থাকে অথবা হচ্ছে কোমলমতি মেধাবী শিক্ষার্থীরা।

যা বলছিলাম বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মব কালচার অথবা মব জাস্টিস যেভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে এখান থেকে পরিত্রাণ পেতে সত্যিকার অর্থে যাঁরা শিক্ষক তাঁরা এখন দিন গুনছেন সেই অবসরের দিনটির অপেক্ষায় নীরবে নিভৃতে এটা ভেবে না জানি মনের অজান্তে কোন ভুলের কারণে মব জাস্টিসের স্বীকার না হতে হয়। আর এরকম ভাবনা না হওয়ার কোন কারণ দেখছি না এই চিত্র দেখে, যে দেশে শিক্ষার্থীরা কলেজ অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি না পেরিয়েই যখন ক্ষমতার স্বাদ পায়। তখন লেখাপড়া বা উচ্চশিক্ষা নামক বস্তুটির স্থান আর তাদের মধ্যে থাকবেই বা কেন যেখানে ক্ষমতা আর অর্থপ্রাপ্তি হাতছানি দিয়ে তাদের ডাকছে এবং যা তাদের হাতের নাগালে। তবে অবসরে গিয়েও যে শিক্ষকগণ শান্তিতে থাকে তাও কিন্তু নয় যেখানে সেই মহান পেশার শিক্ষকের দুর্দশা আর অভাবনীয় কষ্টে থাকতে হয় যেহেতু অবসর সুবিধা আর কল্যাণ তহবিলের অর্থ পেতে তাঁকে বছরের পর বছর কাটাতে হয় অনিশ্চয়তার মধ্যে। তবে এই ব্যাপারটা ঘটে শুধু বেসরকারি স্কুল কলেজ মাদ্রাসার শিক্ষক কর্মচারীদের ক্ষেত্রে যেহেতু শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্যের সৃষ্টি করে রেখেছে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের রাষ্ট্র। রাষ্ট্র যখন জাতির মেরুদণ্ড তৈরি করার কারিগরদের এমনি একটা বৈষম্যের অবস্থায় রেখে বেসরকারি অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের জীবনের শেষ চাওয়া পাওয়াটুকু অনিশ্চয়তার মধ্যে রাখে, অবসরের পর পরই শিক্ষকদেরই সঞ্চিত অর্থ পেতে বছরের পর বছর পর অপেক্ষা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে কাটাতে হয় তখন আর বিশ্ব শিক্ষক দিবস আমাদের দেশের শিক্ষকদের জন্য কতটা কার্যকর ও কতটা ভুমিকা রাখতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। তবে বিশ্ব শিক্ষক দিবস২০২৫ এ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতই আমাদের রাষ্ট্রের প্রতি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি শিক্ষক সমাজের শুধু আবেদনই নয় বরং দাবী, শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈষম্যের অবসান হোক, শিক্ষকদের হৃতগৌরব ফিরে আসুক, শিক্ষক শিক্ষার্থী সম্পর্কের উন্নতি হোক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মব কালচার বন্ধ হোক, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সত্যিকারের গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠানে পরিনত হোক, শিক্ষক দলাদলির অবসান হোক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো গণতন্ত্র চর্চার কেন্দ্রবিন্দু হোক এবং সর্বোপরি বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীদের অবসর সুবিধা ও কল্যাণ তহবিলের অর্থ উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী অতিদ্রুত তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যেই পরিশোধ করে দেশে শিক্ষকদের মাঝে অনিশ্চয়তার চিন্তা দূর হোক, শিক্ষক নামক মহান পেশার মর্যাদা ফিরে আসুক, বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের শিক্ষক জাতি গর্ব করে যেন বলতে পারে, আমরাই বাংলাদেশের শিক্ষক যাঁদের মর্যাদা বিশ্বের অন্য কোন দেশের থেকে কোন অংশে কম নয় এবং তখন হয়ত শিক্ষকগণ সমস্বরে গাইতে পারে

‘শিক্ষক আমি শ্রেষ্ঠ সবার দিল্লীর পতি সে তো কোন্ ছার’

May be an image of 7 people and text



--

মোঃ আজহারুল ইসলাম (জুয়েল)

Retired Senior Teacher (English)

ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার কলেজিয়েট ইনস্টিটিউট পঞ্চগড়
ফোন- ০১৭১৬৮৪৯৮৪৮
হোয়াটসঅ্যাপ- ০১৭০১৯৮০১৮১
ইমেইল- azharul1965@gmail.com

 


 

Comments

Popular posts from this blog

অবসরপ্রাপ্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী, কল্যাণ তহবিল ও অবসর সুবিধা ও প্রেক্ষিত

ড. মুহাম্মদ ইউনূস, জাতীয় সরকার ও প্রেক্ষিত