বার্ষিক সামষ্টিক মূল্যায়ন প্রক্রিয়া ও শিক্ষার্থীদের সক্রিয়তা

বার্ষিক সামষ্টিক মূল্যায়ন প্রক্রিয়া ও শিক্ষার্থীদের সক্রিয়তা

-- মোঃ আজহারুল ইসলাম জুয়েল

 Published in newspaper:  

1. https://drive.google.com/file/d/1n7WZ6dERz59U1caEA36v1aSurbFUGr4H/view?usp=drive_link

2. https://www.dainikshiksha.com 


চলমান কারিকুলামে বিতর্কিত পাঠ্যক্রমে ত্রুটি বিচ্যুতি যাই থাকুক না কেন ৬ষ্ঠ- ৯ম গ্রেডের বার্ষিক সামষ্টিক মূল্যায়নে সংশোধিত পাঠ্যক্রম ও বিষয়ভিত্তিক নমুনা মূল্যায়ন পত্রের সৌজন্যে চলমান বার্ষিক মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার মহাযজ্ঞ সফলভাবেই এগিয়ে চলছে এতে কোন সন্দেহ নাই এবং শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মাঝে শিখন-শেখানো পরবর্তী ধাপ মূল্যায়ন প্রক্রিয়া অর্থাৎ বার্ষিক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের মাঝে যে উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যে এক অভূতপূর্ব পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাতে শিক্ষক শিক্ষার্থী অভিভাবকদের মাঝে গত ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন ব্যবস্থাপনায় যে সন্দেহ যে বিতর্ক সমালোচনা ছিল তা এখন প্রায় নাই বললেই চলে। এবং বেশ আনন্দের ব্যাপার ইংরেজি বিষয়ে প্রতিটি গ্রেডের সংশোধিত পাঠ্যক্রম অনুযায়ী নমুনা প্রশ্নপত্রের যে ধারা সংযোজিত হয়েছে তা শিক্ষার্থী শিক্ষক অভিভাবকগনের কাছে বহুল প্রশংসিত। নতুন কারিকুলাম প্রয়োগের সবচেয়ে বড় যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনুসন্ধানী ও গবেষণামূলক মনোভাব জাগিয়ে তোলা এবং সঠিক মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কাংখিত সাড়া পাওয়া। চলমান বার্ষিক সামষ্টিক মূল্যায়নে বিষয়ভিত্তিক পরীক্ষার প্রশ্নের যে ধারা বিয়োজন সংযোজনের মাধ্যমে সংশোধিত পাঠ্যক্রমে নতুনভাবে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র রচিত হয়েছে এবং প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিজস্ব নামে তা বাস্তবায়ন করছে তাও প্রশংসনীয়। তবে মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় যতই পরিবর্তন ঘটুক না কেন এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা তা হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক যতই সৌহার্দপূর্ণ ও আন্তরিক হবে এর সুফল ততই আরো বেশি হবে এটা ইতোমধ্যে নিবেদিত শিক্ষকগণ নির্ভুলভাবে প্রমাণ করতে চেষ্টা করেছেন এবং করে যাচ্ছেন কিন্তু শিক্ষক শিক্ষার্থী অভিভাবকদের মধ্যে মূল্যায়ন সংক্রান্ত আগের যে ভীতি সন্দেহ তা খোদ কারিকুলাম সিন্ডিকেটের আড়ালে থাকা বিশেষজ্ঞগণ গত ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নে যা কাটাতে পারেননি তা সংশোধিত পাঠ্যক্রমের আলোকে বার্ষিক পরীক্ষা মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় দেশপ্রেমিক কিছু বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষকের সহযোগিতায় সাম্প্রতিক নির্দেশিত বার্ষিক মূল্যায়ন নির্দেশিকা অনুযায়ী মূল্যায়ন কার্যাবলী শেষ করার চেষ্টা করে চলেছেন এবং এই মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় ত্রুটি-বিচ্যুতি যাই থাক না কেন শিক্ষকগণ তাঁদের দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থেকে বিতর্কিত আগের ঐ মূল্যায়ন প্রক্রিয়া সমালোচনার বস্তু হিসাবে যা ভেসে বেড়াচ্ছিল তা থেকে একটু স্বস্তি পেয়েছেন তবে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়াও এখন প্রতিফলিত আর তা হচ্ছে গাইড আর নোট বইএর ব্যাপক ছড়াছড়ি যা শিক্ষার্থীদের ক্লাসমূখী বা পাঠদানে মনোযোগ থেকে বিরত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে বেড়ে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। এবছর শিক্ষার্থীদের ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে সর্বোচ্চ মহল থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায় সকলেই একটা লুকোচুরি খেলার মধ্যে ছিল যা বার্ষিক পরীক্ষার আগে প্রকাশিত শিক্ষার্থীদের বার্ষিক সামষ্টিক মূল্যায়ন পাঠ্যক্রম ও সময়সূচি বের হওয়ার ফলে অনেকাংশে কেটে গেছে। আবার ধারাবাহিক ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নে ডাটা এন্ট্টি প্রক্রিয়ায় তখন শিক্ষা কারিকুলামে সংশ্লিষ্ট দপ্তর সোজা হয়ে দাড়াতে পারেনি। তাছাড়া শিক্ষার সাথে জড়িত কর্তাব্যক্তিদের ততকালীন একঘেয়েমী কথাবার্তা মন্তব্য ও লুকোচুরি খেলার প্রভাব এসে পরেছে শিক্ষক শিক্ষার্থী অভিভাবকদের উপর যা মানসিক ও মনস্তাত্ত্বিকভাবে সফল কারিকুলাম বাস্তবায়নের পথে অন্তরায় ছিল যা হয়তো আগামী বছরে দেশপ্রেমিক দক্ষ বিশেষজ্ঞের সহায়তায় পাঠ্যক্রম পরিকল্পনায় দুর হতে পারে। এক্ষেত্রে গত বছরের শেষে দেশের সকল শিক্ষক এবং এবছরের শুরুতে সকল প্রধান শিক্ষক সহকারী প্রধান শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছিল ঠিকই কিন্তু মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় কারো স্বচ্ছ ধারনা তখনো ছিল না বরং অতিউৎসাহী ও প্রথম থেকেই কারিকুলাম বাস্তবায়নে বাধা হয়ে দাড়ানোর চেষ্টা করা সমালোচকগণ মূল্যায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে শিক্ষার্থী অভিভাবকদের মাঝে বিরূপ ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াতে সবসময়ই সক্রিয় আর এ সুযোগটা তারা আরো বেশি পায় যখন কারিকুলাম সিন্ডিকেটভিত্তিক বিশেষজ্ঞগণের মূল্যায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে সময়ের ব্যবধানে ভিন্ন ভিন্ন মন্তব্য প্রদান প্রায় চোখে পরতো। তবে বাস্তব ও বিজ্ঞান সম্মত অনুসন্ধানী গবেষণামূলক নতুন কারিকুলামে মূল্যায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে যতটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব ভয়ভীতি সন্দেহ বিরাজমান আসলে তা ঠিক নয় বরং এনসিটিবি-র প্রতিটি পাঠ্যবই যদি শিক্ষকগণ প্রশিক্ষণের দক্ষতা কাজে লাগিয়ে শিখন-শেখানো কাজে শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ করতে পারেন তবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে শিক্ষার্থীদের মাঝে ধারাবাহিক বার্ষিক সামষ্টিক মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার মোটামুটি একটা স্বচ্ছ ধারনা পেতে পারা শিক্ষার্থীদের নিকট খুব একটা কষ্টসাধ্য নয় এবং এটা নিঃসন্দেহে বলা যায় এক্ষেত্রে শিক্ষকদের আন্তরিকতাই প্রধান নিয়ামক তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এবং যেহেতু শিক্ষকগণ গত বছর ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেনীর মূল্যায়ন প্রক্রিয়া যে কোনভাবেই হোক সম্পন্ন করার চেষ্টা করেছিল। নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে এনসিটিবি-র প্রতিটি বিষয়ের পাঠ্য বইয়ের প্রতিটি অভিজ্ঞতা ও এক্টিভিটি অত্যন্ত সহজ ও সাবলীলভাবে সন্নিবেশিত করা হয়েছে যা একটু মনোযোগ ও আন্তরিকতার সাথে অনুধাবন করতে পারলেই শিক্ষক- শিক্ষার্থী-অভিভাবক কারো মধ্যে মূল্যায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব তা অবশ্যই কেটে যাবে। এবং সম্প্রতি মাউসি কর্তৃক বার্ষিক সামষ্টিক মূল্যায়নে প্রতি গ্রেডের প্রতি বিষয়ের প্রশ্নপত্রের যে নমুনা শিক্ষকরা পেয়েছেন তা ভালোভাবে সবাই যদি গুরুত্বসহকারে অনুধাবন করতে পারতো এবং শিক্ষার্থীদের সম্যক ধারনা দিতে চেষ্টা করতো তবে বাজারে পাওয়া গাইড বইএর প্রতি শিক্ষার্থীদের এত ঝোক থাকার কথা নয় অবশ্য কতিপয় শিক্ষকেরও বাজারে পাওয়া এহেন গাইড আর নোটবইএর উপরও যে নির্ভরতা কম নয় তা না বোঝার লোক কমই আছে। আবার এক শ্রেনির লোক আছে সবসময়ই মূল্যায়নের নেতিবাচক দিক তুলে ধরার চেষ্টা করছেন বা করে যাচ্ছেন তবে আমরা যাঁরা শিক্ষকতার মত মহান পেশায় নিয়োজিত সমালোচকদের সমালোচনার দিকে কান না দিয়ে সবধরণের নেতিবাচক দিকগুলোকে উপেক্ষা করে ধারাবাহিক বার্ষিক মূল্যায়নে কারিকুলাম প্রদত্ত নির্দেশিকার আলোকে সংশোধিত পাঠ্যক্রমের আলোকে ও নিজের প্রশিক্ষণের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে কমল ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের অত্যন্ত আনন্দ উতসাহ উদ্দীপনা দিয়ে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নে অবদান রাখতে কখনো নিজের মনকে দুর্বল না করে এগিয়ে চলি শিক্ষার সফল বাস্তবায়নে আর জাতির মেরুদণ্ড সোজা করতে নিজেকে নিয়োজিত রাখি সর্বদা।

 

No photo description available. 

 

লেখকঃ 

মোঃ আজহারুল ইসলাম (জুয়েল)

সিনিয়র শিক্ষক (ইংরেজি)

ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার কলেজিয়েট ইন্সটিটিউট পঞ্চগড় 

পোস্ট- পঞ্চগড় পোস্ট কোড- ৫০০০

ফোন- 01716849848

ইমেইল- azharul1965@gmail.com

হোয়াটসঅ্যাপ- 01701980181


Comments

Popular posts from this blog

অবসরপ্রাপ্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী, কল্যাণ তহবিল ও অবসর সুবিধা ও প্রেক্ষিত

বিশ্ব শিক্ষক দিবস ২০২৫ ও বাংলাদেশের শিক্ষক সমাজ

ড. মুহাম্মদ ইউনূস, জাতীয় সরকার ও প্রেক্ষিত