সমসাময়িক রাজনীতি, রাজনীতিবিদ ও সমন্বয়ক
সমসাময়িক রাজনীতি, রাজনীতিবিদ ও সমন্বয়ক
-- আজহারুল ইসলাম জুয়েল
Published in newspaper:
1. https://drive.google.com/file/d/1sLjXiolitQbWcdF_xV6yl3gVD46KjTGZ/view?usp=drive_link
2. https://www.dainikshiksha.com/
আজকে যাঁরা জাতীয় রাজনৈতিক নেতা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ, একসময় ছিলেন ছাত্র রাজনীতির পুরোধা, রাজনৈতিক নীতি আদর্শ প্রচারের মাধ্যমে নিজেদের মেধা প্রজ্ঞা ও বাস্তব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে জনমত গড়ে তোলা ও দলের অনুসারী কর্মী নেতা বানাতেই ব্যস্ত থাকতেন বা আছেন, দলের প্রচার প্রসার কাজই ছিল তাঁদের মূল লক্ষ্য উদ্দেশ্য লেখাপড়ার পাশাপাশি। ষাট, সত্তর আশি অথবা নব্বই দশকের ছাত্ররাজনীতির কিন্তু একটা বড় ঐতিহ্য আছে। তখন বাপের টাকা খরচ করে তাঁরা ছাত্ররাজনীতি করতেন। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার স্বাদের নেশায় তাঁরা রাজনীতি করতেন না বা এখনো করেন না বলেই মনে হয় কিন্তু দেশের জনগণের ভালো থাকা, জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে তা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করতেন এবং এখনো করছেন। সেই সকল জাতীয় ছাত্রনেতৃবৃন্দের অধিকাংশই এখন জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালনকারী রাজনৈতিক দলের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ। তবে সেক্ষেত্রে দেখা যায় অনেকেই তাঁদের দলের নীতি আদর্শ দর্শনকে পুঁজি করে জনমত গঠনে কৃতকার্য হয়েছিলেন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন অথবা এরকম রাজনৈতিক দলও আছে, যেসব দলের নীতি আদর্শ দর্শন প্রচার প্রসারের মাধ্যমে ভবিষ্যতে সরকার গঠন করবেন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অধিকারী হবেন। কতটুকু সফলতা ব্যর্থতা নিয়ে দেশ চালাবেন তা ভিন্ন কথা। আমাদের এই বাংলাদেশ সৃষ্টির মুল নেতৃত্বে কিন্তু ছাত্ররাই। তবে তাঁদের ছিল রাজনৈতিক ভাবধারা নীতি আদর্শ দর্শন এবং পরাধীনতার গ্লানি থেকে মুক্তি পেতে দীর্ঘ সংগ্রাম আন্দোলন ত্যাগ তিতিক্ষার মাধ্যমে তা সম্ভব হয়েছে। জৈবিক চাহিদাও বিসর্জন দিতে হয়েছে অনেককেই। যৌবনের স্বাদ পাওয়ার আগের শহীদ হতে হয়েছে লক্ষ লক্ষ ছাত্র নেতা কর্মী অনুসারীকে। ৫২ ৬২ ৬৯ ৭১ ৯০ এবং ২৪ একই সুত্রে গাঁথা তবে ইতিহাস হয়তো নিকট ভবিষ্যতে বলে দিবে এই সব সালগুলোর তাৎপর্য। সেক্ষেত্রে ৭১ যে মাদারবোর্ড তা স্বয়ং ড. ইউনুস স্বীকার করেছেন এবং ৭১ পুর্বর্বর্তী সময়গুলো মাদারবোর্ডের বিভিন্ন সংযোগ বলা যায়। এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়গুলো ছিল রাজনৈতিক সামাজিক অর্থনৈতিক শোষন বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রাম আন্দোলনের। এবং সেক্ষেত্রে ছাত্ররাই অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী তবে তা রাজনৈতিক নীতি আদর্শ দর্শনকে সামনে রেখেই সংগ্রাম আন্দোলন পরিচালিত হয়েছে যা এখনো চলমান।
পক্ষান্তরে আজকে যাঁরা সমন্বয়ক হিসাবে পরিচিত, যাঁরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জুলাই-আগষ্ট/২৪ এর নেতৃত্বদানকারী, ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের আপামর জনগণকে রাজপথে নামিয়ে স্বৈরাচারী সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে পেরেছিলেন, ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে নিজেদের তুলে ধরতে পেরেছিলেন আন্দোলনের নেতা হিসাবে এবং তাঁদের রাজনৈতিক নীতি আদর্শ দর্শন কি তা না জেনে, না ভেবে ছাত্র জনতা শুধুমাত্র ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনা সরকারকে পতন ঘটানোর জন্যই কালবিলম্ব না করে তাঁদের নেতৃত্বেই মৃত্যুকে পরোয়া না করে ঝাপিয়ে পরেছিলেন রাজপথে এবং স্বৈরাচারী সরকারকে উৎখাত করেই ঘরে ফিরেছিলেন। লক্ষ্য ছিল ওই দূর্নীতিবাজ ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটিয়ে রাষ্ট্র সংস্কারের মাধ্যমে দেশকে নতুন বাংলাদেশে রূপ দেয়া যেখানে থাকবে না কোন অবৈধ নির্বাচন দূর্নীতি বৈষম্য চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের ফলে সেই ফ্যাসিস্ট সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করে পালিয়ে গেছে কিন্তু তার দোসররা এখনো রয়ে গেছে, যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টায় ওঁৎ পেতে আছে, আছে সুযোগের অপেক্ষায় যে কোন রকম গোলযোগ সৃষ্টি করার। আশার কথা এত কিছুর পরেও এক্ষেত্রে রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে দেশ এগিয়ে চলছে ঠিকই তবে রাষ্ট্র পরিচালনায় সরকারকে যতটা দক্ষ অভিজ্ঞ জনগণ মনে করেছিল ততটা কিন্তু তাঁদের মধ্যে অনুপস্থিত বলেই প্রতীয়মান। রাজনৈতিক দক্ষতার অভাব থাকা সত্বেও যখন নিজেকে কেউ অতি বেশি দক্ষ মনে করে তখন জনগণের কিন্তু চেয়ে দেখার ছাড়া আর কিই বা করার আছে। দেখা গেল সমন্বয়কগণের কয়েকজন সরকারে আর বাকীরা সরকারের বাইরে অথবা প্রেসার গ্রুপে এবং এই প্রেসার গ্রুপ নামটাও কিন্তু সমন্বয়কদের মুখ থেকে আসা। বেশ মজার ব্যাপার হলো, ক্ষমতার স্বাদ যাঁরা পেয়ে বসলো শুরুতেই, তাঁদের রাজনৈতিক নীতি আদর্শ দর্শন জনগণের আর জানা হলো না বা তা এখন জানার অবকাশ নেই বরং তাঁরা থেকে যাক ইতিহাসের পাতায় সমন্বয়ক হিসাবে, তবে ছাত্ররাজনীতির নেতা ও দলীয় রাজনীতিবিদ হিসাবে তাঁরা নিজেদের উপস্থাপন করতে চাইলেও সেই সূযোগটা হয়তো তাঁদের আর আছে কিনা তা কারোর ভাববার থাকলে ভাবতে পারেন। সেক্ষেত্রে ছাত্ররাজনীতি, রাজনীতিবিদ এবং সমন্বয়ক এই তিনএর একটা বড় সমীকরণ মেলানো কঠিন, দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে তাই সমন্বয়ক ও রাজনীতিবিদ এখানেই তফাতটা থেকে যাবে আজ আগামীকাল যতদিন যতবছর জনগণ মনে রাখতে চায়।

----
লেখকঃ
মোঃ আজহারুল ইসলাম (জুয়েল)
সিনিয়র শিক্ষক (ইংরেজি)
ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার কলেজিয়েট ইন্সটিটিউট পঞ্চগড়
ফোন- ০১৭১৬৮৪৯৮৪৮
ইমেইল- azharul1965@gmail.com
হোয়াটসঅ্যাপ- ০১৭০১৯৮০১৮১
Comments
Post a Comment