শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও বাস্তবতা

শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও বাস্তবতা

-- মোঃ আজহারুল ইসলাম (জুয়েল)

 Published in newspaper:  

1. https://drive.google.com/file/d/1whx9NrotqGAClTOOlhOIjl9_jTtZz22O/view?usp=sharing

---------


জীবন ও জীবিকার প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রশিক্ষণ নামক জিনিসটার প্রয়োজন যে কত বেশি তা আবালবৃদ্ধবনিতা কারো কাছে অজানা থাকার কথা নয়। এমন কোন পেশা নাই যেখানে প্রশিক্ষণ নিতে হয় না। তবে প্রশিক্ষণের ধরন ও পার্থক্য থাকাটা অন্য ব্যাপার। হয়তো সেই প্রশিক্ষনটা হতে পারে কাউকে অনুসরণ করে অথবা কারো সাহায্য নিয়ে অথবা নিজেই নিজেকে পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে নতুন কিছু শিখে ফেলা যা এক প্রকার বাস্তব প্রশিক্ষণ যার থেকে পরবর্তী বাস্তবতাকে পেরিয়ে যেতে সাহায্য করতে পারে এবং এই যে জীবন ও জীবিকার প্রতিটি ধাপে সামনের কোন কাংখিত অথবা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার মোকাবিলা করে এগিয়ে চলাও কিন্তু মনের অজান্তেই শেখা কিছু প্রশিক্ষণের ফল। তবে মঞ্চে অভিনয় করার প্রশিক্ষণটা কিন্তু অন্যগুলোর থেকে অনেকটাই ভিন্ন এবং সেই মঞ্চটা যদি হয় শিখন শেখানো শিক্ষার মঞ্চ বা জ্ঞান অন্বেষণ করা ক্ষুদে দর্শনার্থীদের মঞ্চ যেই মঞ্চে অভিনেতা যখন একজন শিক্ষক তবে তো তাঁকে আরো বেশি দক্ষ কুশলি হতে হবে অভিনয়ে এবং তা একমাত্রই সম্ভব প্রশিক্ষণ, প্রশিক্ষণ এবং প্রশিক্ষণ। তবে যতই প্রশিক্ষণ গ্রহন করুন না কেন নিজেকে নিজেই বদলাতে না পারলে ঐ যে বার বার প্রশিক্ষণের কথা বলা তার একটিও ফলপ্রসু হওয়ার কথা নয়। এবং এখানেই আমাদের বিবেককে নাড়া দেয় যখন দেখি মাঝে মধ্যেই সরকারি বেসরকারি প্রশিক্ষণ নিয়েও নিজেকে বদলাতে পারা গেলো না তখন সেই দায়ভার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিতে যাবে কেন বরং নিজের প্রতি ক্ষোভ জেগে উঠার কথা এবং সেই ক্ষোভে যদি নিজেকে শুধরে নিয়ে আবারো মঞ্চে অভিনয় করার জন্য প্রস্তুত হওয়া যায়। বস্তুতঃ শিক্ষাদানে নিয়োজিত প্রাথমিক মাধ্যমিক মাদ্রাসা পর্যায়ে শিক্ষকগণের একটা বৃহৎ অংশ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে থাকে শুধু আর্থিক লাভের জন্য, নিজেকে বদলানোর জন্য নয়। কথাটা অনেকের কাছে রুঢ় মনে হলেও বাস্তবতা তাই বলে। রাস্ট্র সরকার শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভাগ সর্বদা শিক্ষকগণকে শিক্ষা পাঠদানে পদ্ধতি কৌশল কারিকুলাম বিষয়ক ধারনা মতামত নীতি আদর্শ দেশপ্রেম সর্বোপরি সামাজিক মূল্যবোধকল্পে শিক্ষকদের যথোপযুক্তভাবে গড়ে তুলতে যেভাবে এগিয়ে চলে বা চলছে সেক্ষেত্রে দেখা যায় শিক্ষকগণের অধিকাংশই নীতি নৈতিকতার ধারের কাছে না গিয়ে বরং একান্তই নিজের মত করে গতানুগতিক ভাবেই চলছে এখনো যা আমাদের শিক্ষাদান নামক মহান কাজের সাথে খুবই সাংঘর্ষিক এবং তার জন্য গোটা শিক্ষা ব্যবস্থায় এর নেতিবাচক প্রভাব পরার জন্য অনেকাংশেই দায়ী। আর সবচেয়ে বড় কথা জাতি গড়ার যে মহান ব্রত নিয়ে শিক্ষকতা পেশায় আসা সেই মহান পেশার প্রতি বুড়ো আংগুল দেখিয়ে চললে কিন্তু তার জন্য একসময় নিজেকে অনুশোচিত হতে হবে তখন হয়তো নিজেকে শুধরানোর সময়টুকুও থাকবে না। তাই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে নিজেকে বদলিয়ে শিক্ষার মঞ্চে সফলভাবে অভিনয় করা নৈতিকভাবে আবশ্যিক যাতে করে ক্ষুদে দর্শকরা শিক্ষক নামের সফল অভিনেতার মনোমুগ্ধকর অভিনয়ে বিমুগ্ধ হয়ে তাঁদের জ্ঞানের ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে পারে এবং সেই অভিনেতার অভিনয় দক্ষতা তাদের জীবনে এনে দিতে পারে অনেক বড় সফলতা। এক্ষেত্রে বর্তমান যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থার সামগ্রিক ও বিষয়ভিত্তিক কারিকুলামের উদ্দেশ্য সঠিকভাবে অনুধাবন অনুশীলন ও প্রয়োগে শিক্ষকগণের আন্তরিকতা ছাড়া অন্য কোন বিকল্প থাকতে পারে না এবং তা একমাত্র একজন ত্যাগী কর্মনিষ্ঠ একাগ্রচিত্ত দেশপ্রেমী শিক্ষকই পারে সঠিক শিক্ষা পাঠদানে নিজেকে সমর্পিত করে উন্নত জাতি গঠনে অবদান রাখতে। এক্ষেত্রে পাঠদান সফল করতে কারো যদি কোন ঘাটতি থাকে তবে দক্ষ সহকর্মীদের সহায়তা নেয়া লজ্জার বা হেয় হওয়ার কোন বিষয় নয় বরং আমাদের ধারনা থাকা আবশ্যক অনেক সময় ছোটদের কাছ থেকেও মাঝে মধ্যে অনেককিছুই শেখা যায়। তাই প্রশিক্ষণকে মনের মধ্যে জায়গা দিয়ে একজন সফল অভিনেতার ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়ে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের সামনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা একজন শিক্ষকের জন্য একদিকে যেমন মর্যাদাপূর্ণ ঠিক তেমনি অন্যদিকে দেশ ও জাতি গঠনে তাঁর ভুমিকা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে সেই মহান শিক্ষক অভিনেতার শিক্ষাদানে।

তাই শ্রেনি পাঠদানের অভিনয়ে যাওয়ার আগে বার বার নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে আজকের অভিনয়ে কিভাবে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মনযোগ আকৃষ্ট করতে হবে, কিভাবে তাঁদের সুপ্ত প্রতিভাগুলো টেনে বের করতে হবে, কিভাবে সকলকে শেখার জগতে বিচরণ করাতে হবে, কিভাবে অভিজ্ঞতাগুলো অর্জন করাতে হবে, কিভাবে অভিজ্ঞতাগুলো প্রয়োগ করাতে হবে। আর প্রশিক্ষণের সাথে সাথে এভাবেই দিন দিন নিজেকে একটু একটু করে পরিবর্তন করিয়ে একজন সফল অভিনেতার ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়ে নিজেকে আবিষ্কার করুন একজন সফল শিক্ষক হিসাবে এবং সত্যি সত্যিই দেখা যাবে শিখন শেখানো জগতটা অনেক বেশি সুন্দর, অনেক বেশি আনন্দের। সেই আনন্দের জগতটা যে নিজেই তৈরী করেছেন তা ভেবে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করতে করতে সব সুখগুলোর উঁকিঝুঁকিতে পরিপূর্ণ হবে এই সুন্দর বাংলাদেশ, এই সুন্দর পৃথিবী। 


No photo description available.

--

মোঃ আজহারুল ইসলাম

সিনিয়র শিক্ষক (ইংরেজি)

ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার কলেজিয়েট ইন্সটিটিউট পঞ্চগড়

পোস্ট- পঞ্চগড় পোস্ট কোড- ৫০০০

ফোন- ০১৭১৬৮৪৯৮৪৮

ইমেইল- azharul1965@gmail.com

হোয়াটসঅ্যাপ- ০১৭০১৯৮০১৮১



Comments

Popular posts from this blog

অবসরপ্রাপ্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী, কল্যাণ তহবিল ও অবসর সুবিধা ও প্রেক্ষিত

বিশ্ব শিক্ষক দিবস ২০২৫ ও বাংলাদেশের শিক্ষক সমাজ

ড. মুহাম্মদ ইউনূস, জাতীয় সরকার ও প্রেক্ষিত