শিক্ষার্থী শিক্ষক সুসম্পর্ক শিখন শেখানোয় সাফল্য
শিক্ষার্থী শিক্ষক সুসম্পর্ক শিখন শেখানোয় সাফল্য
-- মোঃ আজহারুল ইসলাম
Published in newspaper:
1. https://drive.google.com/file/d/1OXGahZXnHmMc_3zK3EDlOnxdMtT0XSBs/view?usp=drive_link
2. https://www.dainikshiksha.com
-------
শিক্ষাদান পেশাটি অন্য সব পেশা থেকে একেবারেই ভিন্ন। শিক্ষাদান পেশায় গিভ এন্ড টেক ফরমুলাটি গ্রহনযোগ্য কিনা আমাদের অনেকেরই জানা নেই বরং শিখন শেখানো কাজে একাগ্রচিত্তে নিয়োজিত নিবেদিত যাঁরা তাঁরা সুখ পায় তখন যখন দেখে তাঁর প্রদত্ত জ্ঞানালোকে পরিপূর্ণ সেই শিক্ষার্থীগণ মানবিক গুনাবলী সম্পন্ন সুশিক্ষিত মানুষ হিসাবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, দেশ ও রাস্ট্রের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছে ঘুনেধরা সমাজ ভেংগে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার তাগিদে আবার একটা নতুন আধুনিক সমাজ গড়বে বলে হাল ধরেছে। দেশ-বিদেশে তথা সারা বিশ্ব দরবারে তুলে ধরেছে তাঁর শিক্ষার আলোবর্তিকা। তাঁর সেই আলোকবর্তিকা দেখে হয়তো পরিতৃপ্তির ঢেঁকুর গিলে মহান সেই শিক্ষকটি ভুলে যায় তাঁর শিক্ষকতা জীবনের খারাপ সময়গুলো অথবা কষ্টের দিনগুলো। মহান শিক্ষক হয়ে উঠতে পারার সার্থকতা কিন্তু এখানেই। তাইতো শিক্ষাদানে নিয়োজিত যাঁরা তাঁদের জ্ঞান, মেধা, অভিজ্ঞতা এবং সর্বোপরি শিক্ষক সুলভ আচরনই পাল্টে দিতে পারে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা, শিখন শেখানোর একটা মডেল হয়ে যেতে পারে তাঁর একাগ্রতা আর প্রবল চেষ্টায়। কিন্তু আমাদের দেশের চিত্রটা সেই মহান শিক্ষকদের থেকে একটু ভিন্নরূপে দেখা যায়। শিক্ষাদান পেশায় এমন অনেকেই নিয়োজিত আছেন যাঁরা এই পেশাকে স্রেফ একটা চাকুরী মনে করেন। শিক্ষক-শিক্ষার্থী-র সম্পর্ক তাঁদের কাছে কিছু দেয়া নেয়ার। এই দেয়ার নেয়ার পর্যায়ে এলেই তাঁর দ্বারা শিখন শেখানো কার্যক্রম পরিচালিত হয় ঠিকই কিন্তু শিক্ষা হয় না বরং সঠিক ও টেকসই শিক্ষাদানের পরিবর্তে তাঁর দ্বারা গড়ে উঠা শিক্ষার্থীরা সমাজ দেশ রাস্ট্রকে ভালো কিছুই দিতে পারে না যেহেতু তাঁদের মেধার বিকাশ ঘটাতে পারেনি। তখন সেই সব শিক্ষার্থীগণও একসময় হয়তো দায়ী করবে সেই ব্যর্থ শিক্ষককে যাঁর থেকে সে ভালো আচরণ থেকে শুরু করে মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন একটা মানুষ হয়ে উঠতে পারেনি। এক্ষেত্রে শিক্ষাদান পেশায় নিয়োজিত যাঁরা এবং নিজেকে শিক্ষক বলে দাবী করেন তাঁদের সাথে শিক্ষার্থীর সম্পর্কের মাঝে কোন দেয়াল না রেখে, কোন রকম ভয়ভীতি না দেখিয়ে, একজন প্রকৃত বন্ধু হয়ে উঠতে পারা গেলে সেই শিক্ষক নিশ্চয়ই তাঁর শিক্ষার্থীকে শিক্ষার সঠিক পথ দেখিয়ে দিতে পারেন, শিখন শেখানোয় যে আনন্দ, পরিতৃপ্তি ও সুখ আছে তা যদি সেই শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মনের ভিতরে প্রবেশ করাতে পারেন তবেই তিনি শিক্ষক হয়ে উঠতে পারেন। তাই তো শিক্ষক হতে হবে শিক্ষার্থীর একজন বাবা, একজন ভাই, একজন মা, একজন বোন সর্বোপরি শিক্ষার্থীর মনে জায়গা করে নেয়া সত্যিকারের একজন ভালো বন্ধু যাঁকে সে বিশ্বাস করতে শিখে, তার দুর্বলতাগুলো অকপটেই স্বীকার করে নিয়ে নিজেকে আবিস্কার করতে পারে জ্ঞানের সাগরে পারি দিতে, আত্মবিশ্বাস জেগে উঠতে পারে যে তাঁর দ্বারাই জ্ঞানারোহন সম্ভব যেখানে সে হোচট খেলে হয়তো সে বিশ্বাস পায় তাঁকে আবার সোজা হয়ে উঠে দাড়ানোর পিছনে সাপোর্ট করার মত বা আগলিয়ে ধরার মত কেউ একজন আছে। শিক্ষার্থীর মাঝে কিঞ্চিৎ ভীতি থাকলে সেখানে শিক্ষাদান ফলপ্রসূ হবে না, হতে পারে না কোন সঠিক শিক্ষা অথবা দীর্ঘস্থায়ী শিক্ষা। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর শিক্ষাক্ষেত্রে অভুতপুর্ব উন্নয়ন ও সাফল্যের পিছনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সুসম্পর্কই মুলতঃ কাজ করেছে বেশি। সেই দেশগুলোতে শিক্ষা পেশায় নিয়োজিত যাঁরা অতি উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও আপাদমস্তক তাঁদের আত্ম অহমিকা বা কোন রকম দুরত্ব বজায় রাখতে শিক্ষার্থীদের সাথে অথচ তাঁরা শিক্ষায়, জ্ঞানে, দক্ষতায় সর্বোপরি বিশ্বের শিক্ষা গবেষণায় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা মহান শিক্ষক। তাঁরা শিক্ষার্থীদের মননে মগজে প্রবেশ করে তাঁদের প্রতিভা বিকাশে অনন্য নজির স্থাপন করে। এক্ষেত্রে বৃটেন, আমেরিকা, জাপান, নিউজিল্যান্ড নাম উল্লেখ করা যেতে পারে তবে একথাও সত্য যে সেই দেশগুলোতে শিক্ষকদের মর্যাদা আর্থসামাজিকভাবে সবার উপরে। তাই সত্যিকারের একজন সুশিক্ষক হতে চাইলে সেই দেশগুলোর শিক্ষা দর্শনসহ সেইসব মহান শিক্ষকগণের জীবনী ও কর্মযজ্ঞ আমাদের দেশের শিক্ষকদের জানা উচিত। আর এভাবেই আমাদের শিক্ষকদেরকে শিক্ষার্থীদের মনের ভিতরে প্রবেশের রাস্তা জানতে হবে, শিক্ষার্থীর মেধাশক্তি, আগ্রহ, অনাগ্রহ, ভালোলাগা, মন্দ লাগা ও পারিবারিক তথ্য সবকিছুই নজরে আনা জরুরি যদি তাঁকে শিখাতে চান, জ্ঞান আহরণে তাঁকে নিবিষ্ট করাতে চান। আর শিক্ষার্থীদের এই মনোজগতে বিচরণ করিয়ে তাঁকে শিখন শেখানো কাজে সহযোগিতা করার জন্যই কিন্তু শিক্ষকগণের জন্য শিশু মনোবিজ্ঞান, শিশুদের মনোজগতসহ শিশুদের মানসিক, শারিরীক, দৈহিকভাবে বেড়ে উঠানোর ধাপগুলো পেশাগত বিভিন্ন শিক্ষক প্রশিক্ষণের অন্যতম অংশ। তাই প্রশিক্ষণের জন্য প্রশিক্ষণ একথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে সত্যিকারের একজন শিক্ষককে শিক্ষাদান বিষয়ে অনুশীলন, গবেষণা করা ও ক্রমাগত শিক্ষাদানের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো সারিয়ে ধারাবাহিক মূল্যায়ন, অভিজ্ঞতার আলোকে পাঠদান প্রক্রিয়ায় বিশেষত্ব আনা জরুরি যাতে করে শিক্ষার্থীদের মেধা প্রকৃতি বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষার্থীবান্ধব একজন সুশিক্ষক হয়ে সঠিক টেকসই পাঠদানের মাধ্যমে তাঁদের জ্ঞানারোহনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়া যায়। সেক্ষেত্রে বর্তমান কারিকুলামের শিক্ষার লক্ষ্য উদ্দেশ্য বিবেচনায় নিয়ে মানসম্মত বাস্তবভিত্তিক শিক্ষাদানে নিয়োজিত থাকতে হলে শিক্ষার্থীদের সাথে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলে সকল শিক্ষার্থীর মেধা যোগ্যতা ও চাহিদামাফিক পাঠদানের কলাকৌশল প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন করে সমাজ দেশ রাস্ট্র তথা বিশ্বে মাথা উচু করে দাড়ানোর মত একটা উন্নত জাতি গঠনে নিবেদিত শিক্ষকগণই পারেন অবদান রাখতে এবং তা এক্ষুনি শুরু করে নিজেকে সত্যিকার অর্থেই একজন ভালো শিক্ষক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা শিক্ষাদানে নিয়োজিত কারো জন্য খুব একটা দুরূহ কাজ বলে মনে করার কোন কারণ থাকতে পারে না এবং আগামীর বাংলাদেশ শিক্ষাদানের জন্য সেইরকম ব্রতী মহান শিক্ষকগণের যাঁদুর ছোয়ার অপেক্ষায় যাঁর ছোঁয়ায় শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের ভান্ডার সমৃদ্ধ করে আচরনিক পরিবর্তনে সহায়ক ভুমিকা রাখতে পারে এবং শিক্ষাব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তনে অবদান রাখা শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র।
---
---
মোঃ আজহারুল ইসলাম
সিনিয়র শিক্ষক (ইংরেজি)
ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার কলেজিয়েট ইন্সটিটিউট পঞ্চগড়
পোস্ট- পঞ্চগড় পোস্ট কোড- ৫০০০
ফোন- ০১৭১৬৮৪৯৮৪৮
ইমেইল- azharul1965@gmail.com
হোয়াটসঅ্যাপ- ০১৭০১৯৮০১৮১
Comments
Post a Comment